রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার | রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার, মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ, গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়

রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার | রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়
রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার: মানুষের বিভিন্ন রোগব্যাধি সহ সমস্যা দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। একইভাবে রক্তশূন্যতা এমন একটি সমস্যা যেটা মানুষের আস্তে আস্তে খুবই বিপদের দিকে টেনে নিয়ে যায়। তাই উপযুক্ত সময়ের ভেতর এই “রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার” না করলে হয়তো সমস্যা দিন দিন আরো বেশি হতে থাকবে। তাই আপনাদের জন্য বিশেষ কিছু “রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়” নিয়ে হাজির হয়েছি।
রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার
নিয়ম নীতি না মেনে আপনি রক্তশূন্যতা প্রতিকার কিংবা দূর করতে পারবেন না। রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলি দেখে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন আপনার রক্তশূন্যতা সম্বন্ধে, এবং রক্তশূন্যতার দূরীকরণ দূর করা ততটা সময় সাপেক্ষ নয়।
অর্থাৎ আপনার যদি রক্তশূন্যতার সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এই রক্তশূন্যতা দূর আপনি ঘরোয়া উপায়ও করতে পারবেন। রক্তশূন্যতা কি অনেকেই আমরা বুঝিনা, তাছাড়া রক্তশূন্যতা বোঝে এর সলিউশনটা অনেকেই করতে পারে না।
সুতরাং চলুন আমরা রক্তশূন্যতার সম্বন্ধিত যত ধরনের সমস্যা এবং সমাধান সবগুলি ধাপে ধাপে বিস্তারিত জানি। কারণ রক্তশূন্যতা সম্বন্ধে অনেকের তেমন ধারণা না থাকাটাও অস্বাভাবিকের কিছু না। রক্তশূন্যতা সম্বন্ধে বিস্তারিত আমাদের জানতে হবে।
আরো পড়ুন:
How to Clean Honeywell fan? Step by Step 2023
How to Create a Powerful Marketing Strategy
রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলো কি কি ?
রক্তশূন্যতার কিছু লক্ষণ রয়েছে, তখনই যার ভিতরে দেখা যায় হয়তো সে রক্ত শূন্যতার মুখোমুখি হয়েছে। আপনি রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহ দেখে বুঝে নেন আপনার রক্তশূন্যতা সত্যি আছে কিনা!
রক্তশূন্যতার সাধারণত রক্তের সাথে সম্পর্কিত একটি সমস্যা। রক্তের চলাচল এবং রক্তের ভেতরকার কিছু বিষয়াদির স্বাভাবিকভাবে না থাকার কারণে আমরা তাকে রক্তশূন্যতা বলি। এমনকি এই রক্তশূন্যতা খুবই মারাত্মক এমন একটি সমস্যা যেটা আস্তে আস্তে মারাত্মক আকার ধারণ করে।
আমাদের শরীরের বিভিন্ন ভঙ্গি ভাবভাব দেখে আমরা সহজে নির্ণয় করতে পারি রক্তশূন্যতার লক্ষণ। তাছাড়া মানুষের সঙ্গে আচার-আচরণ ও কথাবার্তা দেখেও রক্তশূন্যতার লক্ষণ বোঝা যায়। তবে সম্ভাবনা বেশি যেই ক্ষেত্রে লক্ষণীয় এই লক্ষণসমূহ সেগুলি আমরা জানি।
- পুরুষদের ক্ষেত্রে রক্তে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৪ থেকে ১৭ গ্রাম। নারীদের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ গ্রাম। এ মাত্রা কমে নারী ও পুরুষ উভয়ের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- যারা আমরা পুরুষ তাদের ক্ষেত্রে যদি রক্তের হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৪ থেকে ১৭ এর কম হয় তাহলে সমস্যা হবে। অর্থাৎ সে পুরুষের রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রেও হিমোগ্লোবিনের যেটা রক্তের ভিতরে ১২ থেকে ১৫ প্রতি ডেসিলিটারের কমতি আসে তাহলে সেই মহিলারও রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- যদি বুক ধরফর, মাথা ঘোরা, চোখে ঝাপসা দেখার ইত্যাদি কোন লোকের দেখা দেয় তাহলে তার রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
- চোখ মুখ যদি ফেক আসে হয়ে যায় তাহলে সেটি রক্তশূন্যতার লক্ষণ। এভাবে যদি শরীর দুর্বল থাকে, বুক ধরফর করে, মাথা ঘুরে ইত্যাদি কারণও রক্তশূন্যতার লক্ষণ।
- আবার যদি বমি বমি ভাব, চোখে ঝাপসা দেখা, মুখে ঘা, বুকের চাপ লাগা ইত্যাদি সহ রক্তশূন্যতার মাত্রা তীব্র হলে শ্বাসকষ্ট দেখা যায়।
সাধারণত রক্তশূন্যতার লক্ষণ সমূহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়গুলি থাকে সেগুলি উপরে রয়েছে। তবে সহজ বিষয় যদি রক্তশূন্যতা বুঝতে চান, তাহলে তার ভেতর বিভিন্ন বিষয়ের দুর্বলতা দেখা দিবে। এমনকি শ্বাসকষ্ট আশা স্বাভাবিক যখন রক্তশূন্যতার মাত্রা বেশি বেড়ে যায়।
এই লক্ষণ সমূহ যার ভিতরে দেখবেন হয়তো বা তার ভেতর রক্তশূন্যতার প্রভাব পড়েছে। উপযুক্ত সময়ে যদি আপনি এর সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন তাহলে রক্তশূন্যতা দিন দিন বাড়তে থাকবে। তাছাড়া রক্তশূন্যতার লক্ষণ অনেক ক্ষেত্রেও বোঝা যায় না সুতরাং ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
রক্তশূন্যতার কারণঃ
রক্তশূন্যতা কেন হয়? আপনি কি জানেন সেটা, সাধারণত রক্তশূন্যতা হওয়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কিছু কারণ এর ভেতর রক্তপাত অন্যতম। রক্তপাত হলো শরীর থেকে রক্ত কোনো ভাবে বেরিয়ে আসা। তবে এটা যদি রক্তের পরিমাণ অল্প দেখা দেয় তাহলে সেটা রক্তশূন্যতা হিসেবে গণ্য না হতে পারে। এছাড়াও রক্ত শূন্যতার আরো যে কারণগুলি রয়েছে সেগুলির মাধ্যমেও রক্তশূন্যতা হতে পারে।
- রক্তশূন্যতা হওয়ার কারণ হলো কিডনির বিকল, যক্ষা, থ্যালাসেমিয়া (যেটা শরীরের ভিতরের সম্পৃক্ত), ব্লাড ক্যান্সার এবং রক্তক্ষরণ ইত্যাদি।
- সাধারণভাবে রক্তের লোহিত কণিকায় উৎপাদন হ্রাস পেলে, লোহিত রক্তকণিকা ভাঙ্গনে, ট্রমা ইত্যাদির কারণে শরীরের রক্ত কমে যায়। এবং রক্তপাতের কারণেও রক্তশূন্যতা দেখা দিয়ে থাকে।
যেমন– গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল যেটা এক ধরনের রক্তপাত যার মাধ্যমে রক্ত শূন্যতার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- এছাড়াও স্বাভাবিকভাবে আয়নের ঘাটতি, থ্যালাসেমিয়া, অস্থির মজ্জার টিউমার এবং ভিটামিন বি ১২ এর অভাবের কারণেও রক্তশূন্যতা হয়ে থাকে।
রক্তশূন্যতা যদি উপলব্ধি করতে পারেন, তাহলে উপরোক্ত কারণ ছাড়া আপনি ডাক্তারের সঙ্গে অবশ্যই দেখা করে পরামর্শ করে নিবেন। কারণ রক্তশূন্যতার যে কারণ রয়েছে সেগুলি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে, যেটা হয়তো উপরোক্ত কারণ সমূহের ভিতরে নাও করতে পারে।
আরো পড়ুন:
How to Get Health Insurance Free Or Without a job
The Rise of Automation and Its Effects on the Job Market
রক্তশূন্যতার প্রতিকার গুলো কি কি ?
বিভিন্নভাবে রক্তশূন্যতার প্রতিকার করা যায়। এমনকি আলাদাভাবে ও আপনি আপনার মত করে রক্তশূন্যতার প্রতিকার করে নিতে পারবেন নিজেই। যেমন খাওয়া দাওয়া ঠিক রেখে রক্তশূন্যতা প্রতিকার করা যায়। আবার আপনি একটু ব্যায়াম করেও সঠিকভাবে রক্তশূন্যতা প্রতিকার করতে পারবেন।
রক্তশূন্যতার প্রতিকারঃ যেহেতু খাওয়া দাওয়া ঠিক রেখে আপনি রক্তশূন্যতা প্রতিকার করতে পারবেন। এই অনুযায়ী আপনি আপনার খাবারের তালিকায় লাল মাংস, গিলা কলিজা বা গলার যে মাংস থাকে এগুলি খাওয়া দেওয়ার ফলে রক্তশূন্যতা প্রতিকার করতে পারেন। তাছাড়াও আপনি সামুদ্রিক মাছ খাবারের তালিকায় রেখেও রক্তশূন্যতা প্রতিকার করতে সক্ষম হবেন।
রক্তশূন্যতা দূর করার খাবার
রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়– রক্ত শূন্যতা দূর করার বিভিন্ন খাবার রয়েছে যেগুলি খাবারের তালিকায় রেখেও রক্তশূন্যতা দূর করা যায়। আপনি যদি এই খাবারগুলি নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনার রক্তশূন্যতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা অনেক অংশেই বেড়ে যাবে।
রক্তশূন্যতা দূর করার খাবারঃ সাধারণত আয়রন এর ঘাটতির জন্য রক্ত শূন্যতা বেশি হয়ে থাকে সুতরাং এটি পূরণ করতে হবে। এজন্য আমরা প্রচুর পরিমাণে ফল খেতে পারি যেখানে আয়রন লুকিয়ে থাকে, পাশাপাশি আপনি যদি টমেটো, বেদানা, করা, আঙ্গুর, কমলা এবং গাজর খেতে পারি তাহলে বেশি উপকার পাবো।
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার
বাচ্চাদের মন-মানসিকতা এবং চলন ধরন একটু ভিন্নতা দেখা দিলেই রক্তশূন্যতা হওয়ার লক্ষণের ভিতরে পড়তে পারে। তাই বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ গুলি সঠিকভাবে জানা এবং প্রতিকার করা অত্যাবশ্যকীয় আবশ্যক। কারণ ছোট বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা হলে সেটি আসলেই মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে।
বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকারঃ বাচ্চারা যদি খিটখিটে মেসেজের হয়ে যায়, এবং তাদের ভেতরে ক্লান্তি, মাথা ঘোরা এবং বুক ধরফর করে তাহলে সেটি বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ। এছাড়া আরো অন্যান্য লক্ষণ দেখেও বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা বোঝা যদি না যায় তাহলে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। আয়রন খাবারযুক্ত ফলসহ শাকসবজিতে বাচ্চাদের রক্তশূন্যতা দূর হয়। এমনকি দুধ খাওয়ালেও নিয়মিত বাচ্চাদের রক্তশূন্যতার প্রতিকার সম্ভব হবে।
মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ
মেয়েদের রক্তশূন্যতার বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। এই লক্ষণগুলি অতি সহজে ধরা নাও করতে পারে কিন্তু স্বাভাবিকভাবেই এগুলো দেখা যায়।
মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণঃ মেয়েদের রক্তশূন্যতার লক্ষণ হলো চোখ মুখ ফেকাশে, দুর্বলতা বিভিন্ন ক্ষেত্রে, ক্লান্তি, মাথা ঘোরা / মাথা ব্যথা, চোখের ঝাপসা এবং মুখে ঠোঁটে ঘা ইত্যাদি। যদি এই লক্ষণগুলো ধরা না পড়ে তাহলে কি আপনি বুঝবেন আপনার রক্তশূন্যতা হয়নি? মোটেও এমন নয় রক্তশূন্যতা হওয়ার অন্যান্য বিষয় থাকতে পারে সুতরাং পরামর্শটি ডাক্তার সঙ্গে করায় ভালো হবে।
গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়
গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ তাদের রক্তশূন্যতায় বাচ্চা সহ মায়ের বিভিন্ন ক্ষতি হওয়া স্বাভাবিক। তাই অবশ্যই রক্তশূন্যতা যদি গর্ভবতী মায়ের হয়ে থাকে তাহলে এই রক্তশূন্যতা দূর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভবতী মায়ের রক্তশূন্যতা দূর করার উপায়ঃ খাওয়া-দাওয়ার মাধ্যমে সাধারণত গর্ভবতী মায়ের রক্ত শূন্যতা দূর করা যায়। যেমন খাবারের ভেতর কচু শাক, বাঁধাকপি,শিম ও মটর ডাল রান্না করে খেলে গর্ভবতী মায়ের রক্ত শূন্যতা দূর হয়। পাশাপাশি গর্ভবতী মায়ের মাংস বা গোসত, কলিজা, মাছ (সেটা সামগ্রিক হলে ভালো হয়) ইত্যাদি খাবার ফলশ্রুতিতেও রক্তশূন্যতা দূর হবে।
শেষ কথা: রক্তশূন্যতার লক্ষণ ও প্রতিকার | রক্তশূন্যতা দূর করার ঘরোয়া উপায়। সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার জীবনে উপকৃত লাভ হয়েছে। চাইলে একটা কমেন্ট বক্সে আপনার মূল্যবান মন্তব্যটি জানিয়ে আমাকে উৎসাহ করতে পারেন। ধন্যবাদ সবাইকে ।